-->

Welcome here

Confirmed
Deaths
Recovered
Updated:
  • Return by TUSHAR SIDDIK

    বিনিময়

    by

    • সূচনা

    বিনিময়ঃ Tushar Siddik
    মেঘলা রঙের আকাশের এক পাশে অচল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মূর্তি মাথা উঁচু রেখে বুক টান করে দাঁড়িয়ে আকাশের নিরবচ্ছিন্ন মেঘলা রঙের মধ্যে বিচ্ছেদ ধরিয়েছে ছোট্ট একটি ছেলে হাতে কিছু নিয়ে দৃষ্টি সেই দিক পানে সমুন্নত রেখে হেটে চলছে একটু গিয়ে সে থমকে দাঁড়াল মূর্তি কোথায়? সামনে বুক ভরা বিশালতা নিয়ে একটি পাহাড় দাঁড়িয়ে! খানিকক্ষণ এদিক ওদিক দেখে নিয়ে আবার পূর্বাভিমুখে চলতে শুরু করল মনে হচ্ছে সে পাহাড়ে চড়বে
    পাহাড়ের গম্ভীর তন্দ্রা কর্পূরের মত উবে গিয়ে ছেলেটিকে পাহাড়ে উঠা থেকে আটকাল পাহাড় জিজ্ঞেস করল ভারি গলায়- এই খোকা,  কেরে তুই? কেন এসেছিস এখানে?
    ছেলেটি অর্ধকম্পমান কণ্ঠে বলল- আমার নাম টারসিন আমার বন্ধুকে নিতে এসেছি তুমি নিশ্চয়ই গিরি দাদু?

    -হ্যাঁ, আমিই গিরি
    -গিরি দাদু, আমার বন্ধুকে ফিরিয়ে দাও না, প্লিজ
    দাদু শব্দটি যাদুর মত কাজ করল বোধ হচ্ছে তাই পাহাড়ের গলার স্বর নরম হয়ে এলো এবার পাহাড় মিষ্টি মিহি গলায় বলল-বন্ধু? টারসিন, তোর বন্ধু এখানে যে নেই কিন্তু তোর বন্ধুকে ফিরে পেতে আমি আমার সাধ্যমত তোকে সাহায্য করতে পারি তবে বিনিময়ে আমাকে কিছু দিতে হবে নয়তো আমার পাহাড়-পাহাড় অস্তিত্ব যে বিনষ্ট হবে
    -গিরি দাদু, আমার কাছে হাতে শুধু এই শকুন্ত ছানাটা আছে এটা রেখে তুমি আমাকে সাহায্য কর, দাদু
    -শকুন্ত ছানাটাকে আমার ধূসর-সবুজ গায়ের উপর রাখত, দেখি হাটতে পারে কিনা
    তরু ঘেরা পাহাড়ের আলো-আঁধার যুক্ত মাটিতে ছানাটিকে রাখা মাত্রই উড়ে গেল টারসিন ভয়ে অনুনয় করে বলল- গিরি দাদু, আমার কোন দোষ নেই তোমার জন্যই শকুন্তটি উড়ে গেল
    -ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই এই ছানাটিই ঝরনা হয়ে ফিরে আসবে আমার কোলে আমি ওর নাম রাখব ফোয়ারা তুই ফোয়ারার কাছ থেকে জেনে নিস তোর বন্ধু কোথায় এখন তুই বরং আমার বাম পাশের কোলে বসে একটু জিরিয়ে নে
    -আমার তো খুব তাড়া আছে, দাদু আমি এখন জিরোতে পারব না
    -বন্ধুকে যদি পেতে চাস তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে
    -ঠিক আছে আমি জিরিয়ে নিচ্ছি

    • প্রবাহ

    বিনিময়ঃ Tushar Siddik


    কাশের মেঘলা রঙ ঘন হতে হতে কালো বর্ণ ধারণ করতে লাগল টারসিন প্রকৃতির প্রচণ্ড হুঙ্কার
    শুনল কয়েকবার গিরি দাদুর বাম পাশের কোলে থেকে সে আলোর ঝলকানি দেখতে লাগল আর মনে মনে ফন্দি আঁটতে লাগল- বন্ধুর সাথে দেখা হলে সুপার পাওয়ারের ফ্ল্যাশের সাথে ছবি তোলার কথা শোনাবে ফন্দি আঁটতে আঁটতে টারসিন ঘুমিয়ে পড়ল
    অনবরত প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাওয়ায় টারসিনের ঘুম ভেঙ্গে গেল চোখ মেলে সে দেখতে পেল আকাশের মেঘলা রঙ সরে গিয়ে তার পরে থাকা গেঞ্জির নীল রঙের মতো নীলাভ হয়ে আছে এতক্ষণে তরুবরের শাখার ফাঁকে দেখা গেল যে রবি মামা মাথার উপরে চড়ে বসেছে টারসিনের ঘুম ভাঙায় গিরি দাদু আলতো করে বললেন- টারসিন, আমার কোলের ডান পাশে ফোয়ারা অবস্থান করছে তুই তার কাছে গিয়ে বন্ধুর খোঁজ কর আর শোন, আলো ছাড়া মাটি চলতে পারে না প্রয়োজনে মাটি ছেড়ে আলো নিয়ে কাজ করবি
    -দাদু, তোমার শেষের কথাগুলো বুঝলাম না একটু বুঝিয়ে বল
    -আমি তোকে এটা বোঝাব না অন্য কারো কাছ থেকে জেনে নিতে হবে তোকে
    টারসিন গিরি দাদুর কোলের বাম পাশ থেকে ডান পাশে গিয়ে ফোয়ারা নামক ঝরনা ধরে নিচে নেমে এলো ঝরনার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে সে বলল- ফোয়ারা আপু, আমার বন্ধুকে ফিরিয়ে দাও বন্ধুকে নিতে এসেছি
    -বন্ধু? শোন, তোর বন্ধু কোথায় আমি তা জানিনা তুই যদি ছোট ভাই হিসেবে আমার একটা কাজ করে দিস্‌, তবে আমি তোকে আমার সাধ্যমতো সাহায্য করব
    -কি করতে হবে, বল কিন্তু আমার বন্ধুকে এনে দিতে হবে
    -আমার খুব ইচ্ছা চাঁপা-জারুল-জুঁইফুলে একটু সাজব আমার কত সাধ যে নির্ঝর হবে চন্দন বর্ণের কিন্তু সুযোগ কোথায়? আমাকে একটু সাজিয়ে দে দেখি আর হ্যাঁ, কয়েকটা পাহাড়ি লতা-পাতা-মঞ্জুরি ও হিজল গাছ দিয়ে আমার দুই ধার রাঙিয়ে তুলিস্‌
    - আপু, এটা কি আমার দ্বারা সম্ভব?
    -তাহলে বন্ধুর কথা ভুলে বাড়ি যা।
    -না না, আমি আমার বন্ধুকে ভুলতে পারব না। ঠিক আছে আপু, আমি তোমার কথাই রাখব
    ঝরনার কথামত সাজিয়ে দিতে বিকেল পর্যন্ত সময় খরচ এবং প্রচুর পরিশ্রম করতে হল সাজসজ্জার পাঠ চুকে যাওয়ার পর ঝরনা বলল- টারসিন, আমি তোকে একটা নদ সরিৎকে দিচ্ছি এই নদ এর ধার ধরে চলতে থাকলে তোর বন্ধুকে পেতে পারিস
    -এটা কেমন কথা আপু? আমি নদ চাইনা। আমার বন্ধুকে চাই।
    ফোয়ারা জানাল – “যা বলছি তাই কর। নয়তো এটাও হারাতে হবে।
    অগত্যা টারসিন নদের ধারে এসে জিজ্ঞেস করল- আমার বন্ধু কোথায়? বন্ধুকে নিতে এসেছি বন্ধুকে ফিরিয়ে দাও, সরিৎ ভাই
    নদ হকচকিয়ে উঠে বলল- কে তুমি? আমার নাম জানলে কি করে?
    -আমি টারসিন আর তোমার নাম আমাকে ফোয়ারা আপু বলেছে আমার বন্ধুকে এনে দাও, ভাই
    -ও! আমি তো তোমার বন্ধুর কথা জানি না আমার মধ্যে যারা থাকে তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস করতে পার
    নদের ডাকে বাচ্চা মাছ-কাঁচকি মাছ, ছোট মাছ-ভেঁটকি মাছ, বড় মাছ-বোয়াল মাছ, রাক্ষুসে মাছ-পিরানহা, ডলফিন সহ সব জলের প্রাণি জড়ো হল টারসিন তার বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করল তাদেরকে একটি ছোট মাছ মাথা বের করে কাঁচুমাচু করে বলল- তুমি মানুষ জাতির মধ্যে একজন তোমাকে পরামর্শ দেয়া আমাদের পক্ষে অশোভন হবে যদি কিছু মনে না কর তবে আমি একটি পরামর্শ দিতে পারি
    -চট করে বলে ফেল
    -অনুমতি পেলাম তবে একটু পরে চাঁদের বুড়ি ইন্দুকে দেখা যাবে আকাশে তার কাছে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার
    বাধ্য ছেলের মত ততক্ষণ টারসিন জল কেলিয়ে সবার সাথে গল্প করতে থাকল। কত ইতিহাস, কত দুঃখ গাঁথা, রুপকথা তার ইয়ত্তা নেই।

    • বৃত্তান্ত

    সাঁঝ গড়িয়ে আকাশে চাঁদ দেখা গেল চাঁদের বুড়িকে টারসিন জিজ্ঞেস করল,
    -ইন্দু নানু, আমার বন্ধু কোথায়? বন্ধুকে চাই
    -আমি তোর বন্ধুর খবর দিতে পারব না বাছা
    -তুমি তো অনেক উপরে থাক তুমি আমার বন্ধুকে খুঁজে বের করে দিতে পারবে আমার বন্ধুকে এনে দিতেই হবে সেই সকাল থেকে আমি আমার বন্ধুকে খুঁজছি গিরি দাদু, ফোয়ারা আপু, সরিৎ ভাই এরা কেউ আমার বন্ধুর ঠিক ঠিক খবর দিতে পারে নি ইন্দু নানু, উপর থেকে তুমি সব দেখতে পার তবে আমার বন্ধুর খবর দিতে পারবে না কেন?
    -দাঁড়া, দাঁড়া একটু দাঁড়া.. তোর বন্ধুর নামটা কি, বলতো আমায়
    -আমার বন্ধুর নাম SiTorn. ও আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু
    -উম্‌ম্‌ (কিছুক্ষণ পর) তোর বন্ধু এখন বিভা রাজ্যে আছে বলে খবর পাচ্ছি বিভা রাজ্যে আলো ছাড়া আর কিছুই প্রবেশ করতে পারে না
    -আমি তাহলে কিভাবে সেখানে যাব? ইন্দু নানু, সব ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে নয়তো আমার বন্ধুকে এনে দাও
    -একে নিয়ে তো মহা সমস্যায় পরলাম শোন, হন্তদন্ত হওয়ার কিছুই নেই আমার কথা আগে মনোযোগ দিয়ে শোন চুপটি করে থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে
    -বল, আমি শুনছি
    -প্রথমত, তোর বন্ধুকে বিভা রাজ্য থেকে ফেরত আনা কারো জন্যই সম্ভব না কিন্তু যেতে পারবি সেখানে
    -একটু আগেই তো বলেছ যে সেখানে কেউ যেতে পারে না তাহলে আমি কিভাবে যাব?
    -বাঁচালের মত বকবক করিস না সব মানুষের দুটি অংশ থাকে একটি হচ্ছে আলোক, আর অপরটি মাটি যদি মাটির ভিতরে আলো থাকে তবে আমরা মানুষটিকে বলি জীবিত যেকোনো সময় মাটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ভেঙ্গে যেতে পারে কিন্তু তখনও আলোক  অংশটি টিকে থাকে এটা এমন আলোক যা কখনো নষ্ট হয় না তোর মধ্যেও সেই আলো আছে, বাছা
    চাঁদের বুড়ির ব্যাখ্যা শোনার পর টারসিন পাহাড়ের বলা শেষ কথাগুলোর মর্মার্থ বুঝতে পারল পাহাড় তাকে আগেই বলে রেখেছিল কি করতে হবে টারসিন মনে মনে শ্রদ্ধায় তার স্মরণে মাথা নত করল আর কাল বিলম্ব না করে সে চট করে বলে দিল- আমি আমার মাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত ইন্দু নানু, আমার আলোককে বিভা রাজ্যে নেয়ার ব্যবস্থা কর
    এতক্ষণ পরে নদ কথা বলার সুযোগ পেল নদ বলল- টারসিন, আমি যে তোমাকে এত সাহায্য করেছি, তো আমাকে তুমি বিনিময়ে কি দিচ্ছ?
    -সরিৎ ভাই, আমার মাটিটুকু বাদে তোমাকে দেবার মত আর কিছু নেই আমার কাছে তুমি চাইলে এটা নিয়ে নিতে পার
    এই জগতে এখন বিনিময় ছাড়া কোন কাজ করানো যায় না সবাই এখন নিজ নিজ স্বার্থ উদ্ধার করার চেষ্টা করে তবে নদ কেন এর ব্যতিক্রম হবে? মানুষের সাথে তো এর বহুদিনের সম্পর্ক হয়তো বিনিময় আদায় করা মানুষের সাথে থেকে থেকে শিখে নেয়েছে। নদকে বিনিময় দেয়ার জন্য টারসিন যমদূতকে ডাকল
    যমদূত এসে ধমক দিয়ে টারসিনকে জিজ্ঞেস করল- এই পিচ্চি, কি শুরু করেছিস এগুলো?
    -আপনি কে? কেন এসেছেন? নম্র গলায় কথা বলেন নয়তো আমি কিন্তু ভয় পাব
    -হা হা হা হা তাহলে তো আমার পরিচয় পেলে তুই মারা পড়বি থাক এইসব নদ তোর কাছ থেকে বিনিময় হিসেবে যা নিচ্ছে, তা দিয়ে দিচ্ছিস কেন?
    -আমার বন্ধুর কাছে যেতে চাই বিভা রাজ্যে আমার বন্ধু রয়েছে সেখানে শুধুই আলোক যেতে পারে এটা আপনিও জানেন তাই সরিৎ ভাইকে মাটি দিয়ে দিলে কোন সমস্যা নেই
    টারসিনের এই উদার মনোভাবে যমদূতের মনও বিগলিত। এমন বন্ধু পাগল অন্ধ আজো আছে!
    -তোকে, আমাকে, সবাইকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তার অনুমতি ছাড়া আমি এই কাজ করতে পারি না তাঁর কাছে প্রার্থনা কর
    টারসিন প্রার্থনা করতে লাগল- সৃষ্টিকর্তা সবার দুঃখ-কষ্ট বোঝেন, শোনেন তিনি সবার সদিচ্ছাগুলো পূরণ করে থাকেন তিনি মহান ও অসীম তাঁর গুণের কোন শেষ নেই
    প্রার্থনা শেষ হওয়া মাত্র যমদূতের হাতে একটা কিছু দেখা গেল যমদূত সেটা পড়া শেষ করে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল- তোর প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছে এবার আমি আমার কাজ করতে পারি
    -আপনাকে বিনিময় হিসেবে কি দিতে হবে? সবাই তো কম বেশি নিয়েছে
    -আমি কোন কাজের বিনিময় নিই না
    -কথা দিন, আমার আলোকটাকে আপনি চাঁদের বুড়ি ইন্দু নানুর কাছে পাঠিয়ে দিবেন আর মাটিটুকু সরিৎ ভাইকে দিবেন
    -ঠিক আছে
    যমদূত তার কাজ শেষ করে প্রতিজ্ঞা পালন করল
    টারসিনের আলোক [টার্স] এখন এল চাঁদের বুড়ি ইন্দুর কাছে  টার্সকে দেখে তো ইন্দু বুড়ি অবাক!
    -তুই তাহলে চলেই এলি আমাকে বিনিময়ে কিছু না দিলে কিন্তু আর সাহায্য করব না, বলে দিচ্ছি
    টার্স তো এখন মহা ফাঁপরে পড়ল তবুও সাহস করে বলল- তোমারও বিনিময় চাই! কি দিতে হবে বল
    -তোর বন্ধুর সাথে দেখা হলে রোজ আমাকে চিঠি দিতে হবে তোর কাছ থেকে শুধু এটাই চাই
    -ইন্দু নানু, তুমি অনেক ভাল আমি তোমার কথা রাখব এবার বল বিভা রাজ্যে কিভাবে যাব?
    -তুই এই কর্ যানে উঠে পর এটা প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার বেগে তোকে নিয়ে যাবে বিভা রাজ্যে তবে এর দিক নিশানা অতি সন্তর্পনে ঠিক রাখতে হবে তবেই যেতে পারবি বিভা রাজ্যে।
    এবার টার্স জিজ্ঞেস করল- সবই তো বুঝলাম কিন্তু বিভা রাজ্য কোন দিকে
    -ঐ দূরে তাকিয়ে দেখ অতি উজ্জ্বল আটটি প্রদীপ দেখা যাচ্ছে প্রদীপ আটটিকে নিয়েই বিভা রাজ্য তৈরি
    টার্স বুড়িকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে কর্ যানে চড়ে বিভা রাজ্য পানে যাত্রা আরম্ভ করল
                   
    [To be Continued]
  • You might also like

    2 comments:

Popular Posts