ক্যাম্পাসে রাতে (হল পর্ব-১)
Tushar Siddik
Night at the Campus, JU: Tushar Siddik |
চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে!
প্রায় সবার মাঝে যার যার মত মাস্তি, হৈচৈ, নাচানাচি চলছে। একজন অন্যজনের নাম ধরে ডাকছে। সারাদিনের ক্লাসের কথা শেয়ার করছে। কত রকম হাসি-ঠাট্টা-মশ্করা চলছে! অল্প সময়ে ছেলেরা যে এত কাছাকাছি আসতে পারে তা নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে না থাকলে বোঝা যায় না, যাবেও না।
বিকালে ক্লাস শেষে এক বন্ধুর সাথে হলে আসি। হলে থাকার কোন প্ল্যান ছিল না। বন্ধুরা কত রকম ঘটনা শেয়ার করে হলের! আর লোভ সামলাতে পারলাম না। হুটহাট ক্লাসেই হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। হলে ঢুকার পরপরই তিনজন সিনিয়র ভাইয়ের সাথে পরিচিতি উৎসাহ আর একটু বাড়িয়ে দেয়। একজন ভাই অবশ্য আমার এলাকার।
হলে এসে রুমে ঢুকি। ইতিহাস বিখ্যাত গণরুম! বহু ঐতিহ্য, ব্যাক্তিত্ব আর ঘটনার সাক্ষী এই গণরুম। গণরুমের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেশ ছাঁপিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি অর্জনকারী বরেন্য ব্যক্তিত্বদের পাওয়া যায়, সেই সাথে পাওয়া যায় অনেক শিক্ষার্থীদের মনের গহীন কোণের আর্তনাদের নিঃস্বাস। গণরুম থেকে উদ্দীপনা যোগানো সতেজ উত্থান পতনের গল্প যেমন শোনা যায়, তেমনি পেরিয়ে আসা বছরগুলোর স্নায়ুর প্রতিটি রন্ধ্রে ঠান্ডা স্রোত তৈরি করার মত নানা কথা-উপকথা।
হলে উঠার আগে বিখ্যাত বিখ্যাত লোকদের পদচারণার গল্প আমাকেও আর পাঁচজনের মতো আকৃষ্ট করে। এটাতো মুদ্রার একপিঠ। অন্যপিঠে শুনেছি র্যাগিংয়ের কথা। স্বাভাবিকভাবেই আমার মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয়।তবুও সাহসেরর উপর দাঁড়িয়ে, বন্ধুদের উৎসাহের জোরে উঠলাম গণরুমে।
এসে হাত-পা ধুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। রুমের বেশ কয়েকজন ব্যাচ মেটদের সাথে পরিচিত হলাম। সবারই বন্ধু সুলভ আচরণ। প্রত্যকে যেন অপরিচিত কাউকে হঠাৎ করেও আপন করে নেয়ার ঐন্দ্রজালিক শক্তি রাখে। তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা চলল। এরপর দলবেঁধে আমরা জহির রায়হান মিলনায়তনে গেলাম চলচ্চিত্র উৎসবের সাক্ষী হয়ে থাকতে। জহির রায়হান মিলনায়তনে ঢোকার পর একজন বড় ভাই আপ্যায়ন করলেন। যদিও বড় ভাইয়ের সাথে পরিচিতি গড়ে উঠেনি। বন্ধুরা অনেক মজা করে movie দেখলাম!
movie দেখা শেষে মুক্তমঞ্চে যাই আমরা। সেখানে আমাদের ডিপার্টমেন্টেরর আরও বন্ধুরা ছিল। ওদের পেয়ে এখন আমার আরও ভাল লাগছে। মুক্তমঞ্চ থেকে বেড়িয়ে আমরা বন্ধুরা পিঠা চত্বর থেকে বার্গার আর ফ্রাইড চিকেন খেতে যাই! তারপর হাটতে হাটতে আবার রুমে চলে আসি। রুমের ভিতর এখন অনেক বন্ধু রয়েছে যাদের অনেককেই আমি বিকালে দেখি নি। আবারও পরিচিতি পর্ব শেষ করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর রাতের খাবারের জন্য বাইরে যাওয়ার জন্য বন্ধুরা ডাকে। কিন্তু আমার আর তাদের ডাকে সাড়া দেয়া হয় নি। আমি এই ফাঁকে বাসায় আবার যোগাযোগ করলাম।
খাবার খেয়ে বন্ধুরা ফিরে আসে। আবার জমে আড্ডা। কেউ পড়াশোনা করছে। কেউবা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। কেউ পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা করছে। আর ফাঁকে ফাঁকে মজা করে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে নাম।
কিছুক্ষন পর শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ, ছাত্রাবাসের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিগণ, ছাত্র নেতৃবৃন্দ গণরুম পরিদর্শনে আসেন। শিক্ষক মহোদয়গণ আমাদের আশ্বস্ত করেন যে র্যাগিং এর ব্যপারে তারা আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা দিবেন। তারা চলে গেলেন।
এরপর আমরা ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। ঘুম কি আর আসে! উত্তেজনায় যেন ঘুম দরজা দিয়ে করিডোর হয়ে মাঠের ওপারে সুইজারল্যন্ড গিয়ে পালাল। কিছুক্ষণ পর দুইজন বড়ভাই চলচ্চিত্র উৎসবের পরের দিনের টিকেট নিয়ে আসলেন। বড় ভাইরা খুব মজা করলেন আর টিকেট দিলেন।
বড় ভাইদের পর্ব শেষ হলে ঘুমানোর জন্য আমরা রেডি। সবাই মিলে মজা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম তা বলতে পারব না।
No comments:
Post a Comment