জ্ঞানের জাহাজ!
Tushar Siddik
জ্ঞানের জাহাজঃ Tushar Siddik |
গেজা ভাই বললেন-“কি কইবি, ক।”
-ভাই, নভোথিয়েটার কি সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকে?
- হ।
-কবে বন্ধ থাকে জানা থাকলে যদি একটু বলতেন।
-শোন, আমি দুইটা জিনিস মনে রাখি না। প্রথমটা হল কবে নভোথিয়েটার বন্ধ থাকে আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে কোন সিমে কি অফার থাকে!
উত্তর শুনে খানা তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে বসে রইল। বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর বটে!
ড. জ্ঞানের জাহাজ ভাই। সংক্ষেপে জ্ঞা.জা ভাই= জ্ঞাজা ভাই = গেজা ভাই। তিনি খানা সাহেবের বড় ভাই। সিনিয়র বড় ভাই! আপন নয়। এই ঘটনাগুলো খানা সাহেবের জীবনের প্রথম দিকের। তিনি তখনো রাজাহীন রাজ্যের দায়িত্ব নেন নি।
গেজা ভাই একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন অনেক দিন যাবত, প্রায় বছর দুয়েক হবে। সেই হিসেবে তিনি যারা সদ্য জয়েন করেছেন তাদের চেয়ে সিনিয়র! গেজা ভাইয়ের কোম্পানিতে একটা সুন্দর সংস্কৃতি চর্চা হয়। সিনিয়র কর্মীরা উঠতে বসতে জুনিয়রদেরকে শিক্ষিত কর্মী হওয়ার বিশেষ আচার-আচরণ শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাদের এই মহৎ উদ্যোগের খবর কোম্পানির বড় বড় হোমড়া-চোমড়া বস্ বর্গের সমস্ত কান ছুঁয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও প্রশংসিত!
তো খানা সাহেব সবে মাত্র পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছিলেন। খানা সাহেব গেজা ভাইয়েরই চাকরিরত কোম্পানিতে একটা ভাল পোস্টে চাকরি পায়। তাহলে এই কোম্পানিতে এখন গেজা ভাই সিনিয়র ও খানা সাহেব জুনিয়র। কোম্পানির ম্যানেজার খানার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর তিনি খানাকে এই বলে বিদায় নিলেন যে কেউ কোন সমস্যা করলে যেন অনতিবিলম্বে তাকে (ম্যানেজার) জানানো হয়।
সিনিয়র গেজা ভাইরা জুনিয়র খানাকে ট্রেনিং দিতে শুরু করলেন বিশেষ বিশেষ আচরণ। খানা শুধু সেগুলো মাথা- ঘাড় নাড়িয়ে অখাদ্য হলেও যার পর নাই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ভেবে পরমানন্দে টপাটপ গিলে যায়। বোঝার সুবিধার্থে দুই একটা উদাহরণ পেশ করছি।
- পিঠ সোজা করে বসা যাবে না। [ যদি আবার মেরুদণ্ড সোজা হয়ে যায়! ]
- বড় সিনিয়ররা যা বলবে তা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিতে হবে। [ নয়তো বেয়াদবি প্রকাশ পাবে! ]
- সিনিয়রদের প্রয়োজনে নিজের কাজ ফেলে রেখে আগে তাদের (সিনিয়রের) কাজ করে দিতে হবে। [নয়তো আলসেমী নামক ভয়ানক ব্যাধী দেখা দিবে!]
ইত্যাদি ইত্যাদি
।
গেজা ভাইরা অবশ্য এর কোনটাই করেন না। তাহলে জুনিয়র কর্মী শিখবে কাকে দেখে?
বোধ হয় ডাকাত-ছিনতাইকারী দেখে!
বোধ হয় ডাকাত-ছিনতাইকারী দেখে!
বকবকানি অনেক হল। এবার গেজা ভাইয়ের জ্ঞানের ভান্ডার দেখে চমকে উঠুন!
একদিন গেজা ভাই খানাকে জিজ্ঞেস করলেন- “ খানা, ‘গ্রামের বাড়ি’র ইংরেজি শব্দ কি?”
খানা বলে দিল –“Hometown
”
গেজা ভাই বললেন – “ বেটা, এইটাই বলতে পারস না। Hometown বলতে কোন শব্দ নেই। শব্দটা হচ্ছে Homedistric
”
তা শুনে খানা কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু খানা হা করার সাথে সাথেই রাম ধমক খেয়ে চুপসে গেল।
অন্য একদিন সদলবল গেজা ভাই খানাকে দাঁড়াতে বললেন। খানা দাঁড়াল। তারপর খানাকে গেজা ভাই অমৃতবাণী শোনাতে লাগলেন।
কিরে খানা, তুই নিজেরে হেডম অলা মনে করছ? জীবনে তো মানুষ হবি না। তর মত কামের লোক এনে (এখানে) না থাকলেও চলব। বেটা, কামে জয়েন করছস শুক্কুরে শুক্কুরে আষ্ট দিন। তুই এহনই শুরু করছস নেতামী! নিজেরে কি মনে করছ?
খানা শুধু চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল। এবার সুযোগ পেয়ে খানা জিজ্ঞেস করল –“ভাই, কি করেছি আমি?”
- চুপ। তুই একটা কথাও বলবি না। সকালে কার লগে দেখা অইছে?
- ভাই, সিনিয়র এক ভাইয়ের সাথে।
- কেন?
- ফোন নম্বরের জন্য।
- কত্ত বড় কইলজা তর? তুই ফোন নম্বর খোঁজ করছ! ওই তোর নাম খানা রাখছে কে? তুই তো গরুর খানা! তরে এনে মানায় না। গোয়ালে যাইয়া বইয়া থাক। তাও তুই কামে লাগবি।
- ভাই, ফোন নম্বর দরকার ছিল।
- তুই আবার কথা কছ!
অগত্যা কেবল চুপ থেকে খানা হজম করে গেল। কিচ্ছু করার নেই। স্বামী বিদেশ! তাছাড়া শিক্ষিত সিনিয়র ভাইয়ের অমৃতবচন! হজম না করে উপায় কি!
No comments:
Post a Comment