-->

Welcome here

Confirmed
Deaths
Recovered
Updated:
  • Indescribable Tale by Tushar Siddik

    অকথন কথ্য

    Tushar Siddik

    অকথন কথ্যঃ Tushar Siddik
    খানা সাহেব, রাজাহীন রাজ্যে প্রভুত্ব কায়েম করেছেন কয়েক যুগ হল।
    ঘটনার প্রারম্ভ সেই অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে। সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেঁটে পড়েছে রাজার বিরুদ্ধে। কারণ রাজা সাহেব বছর বছর শুধু খাজনা বাড়িয়ে চলেছেন তো বাড়িয়েই চলেছেন। না শুনেন সাধারণ প্রজার আঁকুতি, না শুনেন অমাত্যদের মিনতি। মানুষ আর সইতে না পেরে রাজ্য থেকে রাজা হটাল খানা সাহেবের পরামর্শে।

    রাজ্য চালানোর ভার খানা সাহেব নিজের পবিত্র হাতে তুলে নিলেন। অন্য কেউ এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার ধৃষ্টতাও দেখাল না। খানা সাহেব ঘোষণা দিলেন যে এখন থেকে শুধু আনন্দ হবে। খাবার দাবার সহ সব বিনামূল্যে। আর পয়সা লাগবে না। দরকার নেই এত টাকা খরচ করে নতুন নতুন টাকা বানানোর! যার যখন যা লাগে শুধু নিয়ে নিবে। খানা সাহেবের বক্তব্যে ধন্যি ধন্যি রব উঠল। কৃষকের কাপড় লাগলে তাঁতী-দর্জির কাছ থেকে নিয়ে নেয়। টাকা লাগে না। দর্জির মাছ লাগলে জেলের কাছ থেকে বিনামূল্যে নিয়ে নেয়। এমন ব্যবস্থায় সবাই খুশি। খানা সাহেবকে আন্তর্জাতিক মানের পুরস্কার দেয়ার ভাবনা ভাবতে লাগল সবাই।

    এদিকে খানা সাহেব সব অর্থ জমা নিয়ে নিলেন মানুষের কাছ থেকে। সবই তো বিনামূল্যে পাওয়া যায়, অর্থ জমা রেখে কী লাভ! আমজনতা এমন থিসিসের প্রশংসা করতে করতে সব অর্থ জমা দিয়ে দিল।

    খানা সাহেব আরো একটা মহৎ কাজে হাত দিলেন। মহৎ কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাই একই অবস্থায় থাকবে। ধনী গরীব বৈসাদৃশ্য থাকবে না। লোকজন তো আহ্লাদে আটখানা! এই মহৎ উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য তিনি কতিপয় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ দিলেন। এদের কাজ হচ্ছে মানুষের অতিরিক্ত জিনিসগুলা সবার অজান্তে ও অলক্ষ্যে হাতসাফাই করা। এভাবে দরিদ্ররা ধনীদের সমান হওয়ার সুযোগ পাবে! বাস্তবে হয়েছেও তাই। কিন্তু মানুষের মনের আনন্দও বিশেষায়িত কর্মীরা হাত সাফাই করে পা সাফাইও করে ফেলেছেন!

    সবকিছু খানা সাহেবের স্থিতিস্থাপক ভাণ্ডারে জমা হচ্ছে।

    মনের দু:খ কষ্ট দূর করার জন্য সবাই খানা সাহেবের সুউচ্চ আসনের তলায় জমায়েত হয়ে নিজেদের অনুযোগ জানাল। খানা সাহেব বললেন ভারি চিন্তার বেপার। তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ১ মাস পর তারা রিপোর্ট করবে। ১ মাস নেয়ার যুক্তি হচ্ছে তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়! সবাই তো মহাখুশি। খানা সাহেবের পবিত্র মুখ নিঃসৃত কথা বলে কথা!

    দিন যেতে থাকে আর দরিদ্ররা ধনীদের সমতুল্য হতে থাকে খানা সাহেবের দৌরাত্ম্যে। আর মহান খানা সাহেব উঁচুতে উঠতে উঠতে আকাশ ছুঁই ছুঁই করছেন। তিনি আরো অনেক ন্যানো থেকে ন্যানোতর, গিগা থেকে গিগায়েস্ট প্ল্যান-প্রজেক্ট দিয়ে চলেছেন। কিন্তু কেউ আর খুশি হয় না। এতদিনে সবাই বিখ্যাত খানা সাহেবের উদ্ভাবনী ক্ষমতার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। বিনাপয়সার গুপ্তচর এসে বিষয়টা কর্মণ্য খানা সাহেবের কানের কাছে অতি সন্তর্পণে ও গোপনে পেশ করল। পাছে মহা গুরুত্বপূর্ণ কথাটা কান থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যায় কিংবা অন্য কেউ শুনে নেয়! চিন্তামণি খানা সাহেব চিন্তায় ডুবে গেল। সুচিন্তা করার জন্য তিনি চেয়ারের পায়া আরেকটু উঁচু করে নিয়ে গম্ভীর ধ্যানে বসলেন। গম্ভীর ধ্যান করলে সব সমস্যার সমাধান আসে বলে এই কীর্তিমানের অগাধ বিশ্বাস।

    কয়েকদিন কেটে গেল। খানা সাহেব লা-পাত্তা। মানুষ শুধু তার চেয়ারের পায়া দেখতে পেল। চেয়ারের উপরে কেউ আছে কিনা তা নিচ থেকে বোঝা যাচ্ছে না। কেউ উঠবে তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ পবিত্র চেয়ারটিকে ছুঁয়ে দেখতেও সাহস করল না। অনেক জোর জবরদস্তি করে স্বয়ং খানা সাহেবের দ্বারা নিযুক্ত বিশেষায়িত কর্মীদের একজন সদস্যকে মই দিয়ে চেয়ারের উপরের পরিবেশ দেখার জন্য পাঠানো হল।

    খানা সাহেব তো এই অপেক্ষায়ই ছিলেন। তিনি ধ্যান ভেঙ্গে আগে মইয়ে অবস্থানরত কর্মীকে দুইটা চড় দিয়ে নিলেন। নিচের সমবেত সবার মাঝে হায়হায় রব উঠল।

    খানা সাহেব একটু কেঁশে গলা ঝেড়ে সমবেত সবার উদ্দেশ্যে থামতে বললেন। আস্তে আস্তে হৈচৈ থামল। এবার খানা সাহেব সুখ সংবাদ দেয়ার ভঙ্গিতে ঘোষণা দিলেন যে সবার দুঃখ কষ্টের কারণ তিনি জানেন। তদন্ত কমিটির একজন বলল- "মহামান্য মাননীয় খানা, আমরা তো এখনও তদন্ত শেষ করিনি।" কথা শেষ হবার আগেই খানা ডিটেক্টিভকে ধমক লাগাল, "চুপ, ব্যাটা বেয়াদব! তোদের জন্যই আজ মানুষের এই দুরাবস্থা।"

    এবার জনতার উদ্দেশ্যে মি: খানা ভাষণ দিলেন, "আমার প্রাণাধীক প্রিয় ভাইসব, সব খবর আমি জেনে গিয়েছি। আপনারা এখন আমার উপর অসন্তুষ্ট, এটাও আমার জানা। কিন্তু স্বয়ং আমি নিজে তদন্ত করে দেখেছি আপনাদের দুরাবস্থার পেছনে আমার নেতৃত্বের কোনো প্রভাব নেই। এর জন্য দুটি কারণ দাযী। প্রথমত, আমার নিযুক্ত কর্মীরা প্রশিক্ষণের অপব্যবহার করেছে। তারা আপনাদের কাছ থেকে ডাকাতি করেছে। আপনারা সাক্ষী, আমি বলেছিলাম ধনী-দরিদ্র বৈসাদৃশ্য দূর করতে। অশিক্ষিত লোকগুলো ব্যর্থ হয়েছে।"

    সবাই খানা সাহেবের বক্তব্যের মর্মার্থ বুঝতে পেরে কর্মীদেরকে ধিক্কার দিতে লাগল। সেই সাথে খানা সাহেবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠল সবাই। হাত তালিতে মুখরিত পুরো অঙ্গন।

    খানা সাহেব বলতে লাগলেন, "দ্বিতীয় কারন হচ্ছে আপনারা নিজেরা।"

    মানুষ এই কথা শুনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করল। এতক্ষণ কর্মীদের দোষ সবাই মজা করে সুস্বাদু খাদ্যবস্তু মনে করে হজম করছিল। যখনই নিজেদের লেজে পা পড়েছে, অমনি ক্ষেপে উঠল। এটাই মানুষ নামক প্রাণির আজিব চরিত্র!

    খানা সাহেব বললেন," বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আমাকে কথা শেষ করতে দিন।"
    হৈচৈ কমে আসল।
    খানা সাহেব কথা বলা আরম্ভ করলেন আবার- "আমি বলেছিলাম বিনামূল্যে সবাই সবকিছু নিবে। কিন্তু কাউকে তো উপহার দিতে নিষেদ করি নি। আপনারা যদি একজন অন্যজনকে সামান্য করে উপহার দিতেন, তাহলে আমাকে আজ এই দুর্দিন দেখতে হত না।"

    সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আফসোস করতে লাগল। এই মহান জীবিত কিংবদন্তী নেতাকে ভুল বোঝা! হায় কপাল!

    খানা সাহেবের দুঃখে দুঃখিত হয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সাহিত্যক শ্রেণির জনতা পদ্য রচনা করে নিল।
    "জ্ঞানে মানে গুণে ভরা
    আমাদের এই মহান নেতা,
    পাবে নাকো খুঁজে কোথা
    আমাদেরই মহান খানা!"
  • You might also like

    No comments:

    Post a Comment

Popular Posts