সে দিনটা তো দেখিনি
ইতহাস আমায় জানিয়েছে
অনুপ্রেরনার কাহিনী!
সম্মানিত সভাপতি, বিশেষ অতিথি, সমবেত সুধীমন্ডলী, ভাই-বোন ও বন্ধুগণ, সবাই প্রথমেই বিজয়ের এই মহান দিনে আমার সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
আজ ১৬ই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালির জীবনে এক পরমানন্দের দিন। শৃঙ্খল ভাঙার দিন। স্বাধীন আকাশে - বিজয়ীর বেশে, মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াবার দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর, ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের ২রা পৌষ, বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) খোলা আকাশের নিচে একটি টেবিলে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি চূড়ান্ত বিজয়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের এই বিজয়।
৩০ লক্ষ শহীদের টগবগে তাজা রক্ত, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা নামের পাখিটি এসেছে বাংলায়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকে বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ১১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে আমরা হারিয়েছি। আমরা হারিয়েছি ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ১৩ জন সাংবাদিক, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী সহ অনেককে। হারিয়েছি অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লাহ্ কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গদের।
বিজয়ের এই দিনে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই আমাদের সেইসব জাতীয় বীরদের যাদের অকৃত্রিম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি খাইলকুরের গর্ব, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানকে। আরো স্মরণ করছি গাজীপুরে সংগঠিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে (১৭ই মার্চ, ১৯৭১) নিহত শহিদ হুরমত, নিয়ামত সহ সবাইকে। শ্রদ্ধা জানাই মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এম.পি, ভাওয়াল বীর শহিদ আহসান উল্যাহ্ মাস্টার এম.পি, বীর মু্ক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, কমান্ডার রফিকুল ইসলাম সহ আমার দেশের সকল গাজীদের, যাদের রণকৌশলে পরাস্থ হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক-বাহিনীরা। আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
ভয় নাই, ওরে ভয় নাই-
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই...।
হানাদার বাহিনীর বর্বরতার দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে বাংলার অকুতোভয় বীরযোদ্ধারা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করেছিল। তাদের অসামান্য অবদানের ফলেই বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে আজ দাঁড়িয়ে আছে একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ড। আর আমরা পেয়েছি লাল সবুজ পতাকা। গাজীপুর শত্রুমুক্ত হয় ১৫ই ডিসেম্বর।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
বাংলার এসব সূর্য সন্তানদের অবদান আমরা কোন দিনও ভুলতে পারবো না। তাদের অসামান্য অবদানের কথা প্রতিটি বাঙালির অন্তরের অন্তঃস্থলে চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। আজ ৪৮তম বিজয় দিবসে আমরা আমাদের সেসব জাতীয় বীরদের সকল বাঙালির পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা।
"মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল" এই স্লোগানে এগিয়ে চলা দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর। শিশু কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষে ১৯৫২ সালের ২রা মে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সারাদেশে খেলাঘরের ৬০০ এর অধিক শাখা আসর পরিচালিত হয়ে আসছে। সাংস্কৃতিক বিনিমার্ণের মাধ্যমে আজকের শিশুদের গড়ে তোলার দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে হলে খেলাঘরকে আরও বিস্তৃত করতে হবে। শিশুহত্যা, শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে, পাঠ্যবই সহ সর্বস্তরে সাম্প্রদায়িকতা রোধ করতে, নিপীড়নমূলক শিক্ষা বন্ধ করতে, ছুটির দিনে শিশুদেরকে শুধুমাত্র পড়াশোনার চাপ থেকে মুক্ত রাখতে, সহিংসতায় শিশুদের যাতে ব্যবহার করা না হয়, বিদ্যালয়ে খেলারমাঠ ও শহীদ মিনার রাখতে, বাল্যবিবাহ রোধে, খাদ্যে ভেজাল মুক্ত করতে, মাদক নির্মুল করতে, মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতকরণ বন্ধ করতে, শিশুদের নৈতিকতাবোধ জাগিয়ে তুলতে, সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে, সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে, পাড়ায় পাড়ায় খেলাঘর গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে ধন্যবাদ জানাতে চাই ক্ষণিকা খেলাঘর আসর কর্তৃক আয়োজিত বিজয় উৎসবে আগত কোমলমতি ছোট্ট ভাই-বোনদের, অভিভাবকবৃন্দকে আমন্ত্রিত অতিথিদের, অংশগ্রহণকারী বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকবৃন্দকে, কবি জসীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদকে, বিশেষভাবে অন্তর কে এবং খেলাঘরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে যাদের পরিশ্রমে আমাদের আয়োজন সার্থক ও সফল হয়েছে।
বিজয় মানে জয়োল্লাস
বিজয় মানে হাসি
বিজয় মানে স্বাধীন বাংলা
রাজাকারের ফাঁসি
বিজয় মানে শোষণবিহীন সমাজ
বৃদ্ধ-যুবা ও শিশুদের হাসি।
-তুষার সিদ্দিক
স্থানঃ কবি জসীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়,
ওয়ার্ড নং-৩৫,
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন।
-তুষার সিদ্দিক
স্থানঃ কবি জসীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়,
ওয়ার্ড নং-৩৫,
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন।
No comments:
Post a Comment