'ইফকের ঘটনা' মনে আছে?
পঞ্চম হিজরীর (আনুমানিক ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ) এরকমই শাবান মাসে ঘটেছিল। সেটা 'বনু মুসতালিক' এর যুদ্ধ ছিল। আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল যে এ যুদ্ধে রক্তপাত হবে না। তাই সাহাবীদের সাথে সাথে বহু মুনাফিক নির্ভয়ে অংশ নেয়।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সাথে হযরত আয়িশা (রা.) কে নিয়ে সফরে বের হলেন। যাওয়ার সময় আয়িশা (রা.) তাঁর বোনের কাছ থেকে একটি হার ধার নেন। হারটির আংটা এতো দুর্বল ছিল যে বারবার খুলে যাচ্ছিলো।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় শেষে ফেরার পথে রাতের বেলায় এক অপরিচিত জায়গায় যাত্রাবিরতি হয়। আয়িশা (রা.) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দূরে চলে গেলেন। ফেরার সময় হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখলেন ধার করা হারটি নেই। তিনি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেন। হতভম্ব হয়ে তিনি হারটি খুঁজতে লাগলেন। তিনি ভেবেছিলেন যাত্রা আবার শুরু হবার আগেই তিনি হারটি খুঁজে পাবেন আর সময়মতো তাবুতে পৌঁছে যাবেন। তিনি না কাউকে ঘটনাটি জানালেন, না তার জন্য অপেক্ষা করার নির্দেশ দিলেন।
খুঁজতে খুঁজতে তিনি হারটি পেলেন অবশ্য কিছুক্ষণ পর। কিন্তু ততক্ষণে সবাই রওনা হয়ে গেছে। কেউ বুঝতে পারেন নি যে আয়িশা (রা.) তাদের সাথে নেই। আয়েশা (রা.) তাবুর স্থানে এসে কাউকে পেলেন না। তিনি চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানেই পড়ে রইলেন। ভাবলেন, যখন কাফেলার লোকজন বুঝতে পারবে তখন আবার এখানে ফিরে আসবে তাঁকে নেয়ার জন্য।
সে সফরে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সফওয়ান (রা.)। তাই তিনি একটু দেরী করে রওনা দিয়েছিলেন। তিনি একটি অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে এলেন। আর চাদর মুড়ি দেয়া অবস্থাতেও আয়িশা (রা.) কে চিনতে পারলেন। একটি উটের পিঠে আয়িশা (রা.) কে উঠিয়ে নিলেন। অনেক চেষ্টা করেও ভোরের আগে তারা কাফেলাকে ধরতে পারলেন না।
এদিকে আয়িশা (রা.) কে কাফেলায় না দেখতে পেয়ে মুনাফিকরা কুৎসা রটাতে শুরু করে। ঘটনার প্রায় ১ মাস হয়ে গেলেও কোনো মীমাংসা হয় নি। অপবাদকারীরা আরো জোরে শোরে তাদের কুৎসা রটাতে থাকে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ্ (সা.) এতে খুবই মর্মাহত হলেন। আয়িশা (রা.) এর তো দুঃখের সীমাই ছিল না। সাধারণ মুসলিমগণও তীব্রভাবে বেদানাহত হলেন। অবশেষে আল্লাহ্ তা'আলা উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা (রা.) এর পবিত্রতা বর্ননা এবং অপবাদ রটনাকারী ও এতে অংশগ্রহণকারীদের নিন্দা করে নিচের আয়াতগুলো নাযিল করলেন।
"যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি। যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।" (সূরা নূরঃ ১১,১৯)
No comments:
Post a Comment