-->

Welcome here

Confirmed
Deaths
Recovered
Updated:
  • Bhawal to Gazipr (Rising of the Royal Family)

    ভাওয়াল থেকে গাজীপুর
    (রাজপরিবারের উত্থান)

    Raja Kali Narayan Ray
    Raja Kali Narayan Ray
    সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভাওয়াল গাজীর উত্তরসুরী (৫ম উত্তরপুরুষ) দৌলত গাজীর দিউয়ান হিসেবে কুশধ্বজ রায় কাজ করতেন। ঢাকার নবাব নাজিমের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার সময় কুশধ্বজ মোক্তার ছিলেন। মোক্তারের বিচক্ষণতায় দৌলত গাজী সে মামলা জিতেছিল। খুশি হয়ে কুশধ্বজকে তিনি দিউয়ানের পদ দেন।

    কুশধ্বজের বংশধরেরা নিজেদেরকে বিক্রমপুরের বিখ্যাত বজ্রযোগিনী গ্রামের পুশিলাল গোত্রীয় ব্রাহ্মণ গোত্রভুক্ত বলে দাবি করতেন। বজ্রযোগিনী হচ্ছে বৌদ্ধ পণ্ডিত ও বিশ্বপরিব্রাজক অতিশ দীপঙ্করের জন্মভুমি। জনশ্রুতি রয়েছে বলরামের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ ওরফে কৃষ্ণ নারায়ণ রায় দানসূত্রে ভাওয়াল পরগণার নয় আনা হিস্যার অধিকার লাভ করে জমিদার শ্রেণীভুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে সুবে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছিলেন সম্রাটের পুত্র আজিম-উস্‌শান বা আজিমুদ্দিন। তিনি একাধারে প্রশাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে সুবাদার এবং রাজস্ব বিভাগের প্রধান হিসেবে দিউয়ানের দায়িত্ব পালন করতেন। আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির ফলে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন মারাঠা দমনে। যুদ্ধ বিগ্রহের ব্যয় নির্বাহের জন্য বাংলার রাজস্বের উপর তিনি ছিলেন অনেকাংশে নির্ভরশীল। আজিম-উস-শান ভবিষ্যতে দিল্লির মসনদে আরোহনের কথা ভেবে প্রজাপ্রীড়ন এবং ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থ সম্পদ সঞ্চয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন।

    বাংলা থেকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সম্রাট বাংলার দিউয়ান হিসেবে নিয়োগ দেন মুর্শিদ কুলি খানকে। ইতোপূর্বে মুর্শিদকুলি খান বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ান হিসেবে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। তাকে অতিরিক্ত সুবে বাংলার দিউয়ানেরও দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি ঢাকায় এসে আজিম-উস-শানের অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করে দিলেন। শাহাজাদা মুর্শিদ কুলি খানকে ভাল চোখে দেখলেন না। তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেন। এ পরিকল্পনা তিনি ব্যর্থ করে দিয়ে সম্রাটের অনুমতিক্রমে ঢাকা হতে রাজধানী ভাগিরথীর তীরে মখসুদাবাদে স্থানান্তরিত করলেন। অতঃপর বাংলার বকেয়া রাজস্ব আদায়ে মনোযোগী হলেন। মুর্শিদকুলি খানের নামানুসারে মখসুদাবাদের নাম হয় মুর্শিদাবাদ। তিনি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হিসেবে পরিগণিত হন।

    নবাব মুর্শিদকুলি খান বাংলায় ‘তৃতীয় মুঘল’ বন্দোবস্ত চালু করেন। তিনি সুবা-ই-বাংলাকে ১৩টি চাকলা এবং ১৬৬০ টি পরগণায় বিভক্ত করে শাহসুজার আমলে ধার্যকৃত রাজস্ব ১,৩১,১৫,৯০৭ টাকার স্থলে ১,৪২,৮৮,১৫৬ টাকা ধার্য করেন। এ সময় রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১,৭২,২৭৯ টাকা। মুর্শিদকুলি খান অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে নতুন করে ভূমির বন্দোবস্ত দিয়ে জমিদার শ্রেণীর সৃষ্টি করেন। এ সময় হতে প্রকৃত ভূমি মালিকগণ তাদের মালিকানা স্বত্ব হারাতে থাকে। রাজস্ব বকেয়ার দায়ে পুরাতন জমিদারদের উচ্ছেদ করে নব্য জমিদারেরা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুর্শিদ কুলি খানের অন্যতম রাজস্ব নীতি ছিল মুসলিম প্রজা সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় হিন্দু জমিদার নিয়োগ। তাঁর সময়ে অসংখ্য মুসলিম জমিদার বিতাড়িত হন এবং তদস্থলে হিন্দু জমিদারগণ জমিদারি লাভ করেন।

    জনশ্রুতি রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ দান সূত্রে ভাওয়াল পরগণার ৯ আনা হিস্যার অধিকার লাভ করেছিলেন। প্রকৃত পক্ষে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন অত্যন্ত চতুর ও কৌশলী। তৎকালীন বাংলার প্রধান দেওয়ান মুর্শিদকুলি খান পরবর্তী কালে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব এর অত্যন্ত প্রিয় ভাজন হয়ে ওঠেন শ্রীকৃষ্ণ। ভাওয়ালের জমিদারগণ (গাজী বংশ) মুর্শিদকুলি খানের এই নীতির ফলে জমিদারি স্বত্ব হারান। এই সুযোগে শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত কৌশলে গাজীদের বঞ্চিত করে জমিদারি হস্তগত করেন। এভাবে শ্রীকৃষ্ণ দানসূত্রে নয় বরং মুর্শিদকুলি খানের উক্তরূপ রাজস্ব নীতির কারণে ১৭০৪ সালে ভাওয়াল জমিদার দৌলত গাজীর জামিদারির বৃহদাংশ লাভ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ওরফে কৃষ্ণ নারায়ণ রায়-ই হলেন ভাওয়াল জমিদার বংশের আদি প্রতিষ্ঠাতা।

    কৃষ্ণ নারায়ণের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র জয়দেব নারায়ণ ভাওয়ালের জমিদারি লাভ করেন। জয়দেব নারায়ণের নামানুসারে পীরবাড়ি মৌজার নামকরণ হয় জয়দেবপুর। জয়দেব নারায়ণের মৃত্যুর পর তার পুত্র ইন্দ্র নারায়ণ এবং ইন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর তার ছেলে কীর্তি নারায়ণ ভাওয়ালের জমিাদারি প্রাপ্ত হন। কীর্তি নারায়ণের মৃত্যুর পর তার ছেলে লোকনারায়ণ এবং তার মৃত্যুর পর ছেলে গোলক নারায়ণ জমিদারি লাভ করেছিলেন। গোলক নারায়ণ ইহধাম ত্যাগ করলে তার পুত্র কালি নারায়ণ রায় ভাওয়ালের জামিদার হন।

    ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আমবাগানের প্রহসনমূলক যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন ঘটে। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ সালের ১২ আগস্ট মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানি বা দিউয়ানি লাভ করে। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে ১৭৭২ সালে পাঁচসনা বা পাঁচ সালা, ১৭৭৭ সালে এক সনা বা বাৎসরিক এবং ১৭৯০ সালে দশ সনা বা দশ সালা বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করে। দশ সনা বন্দোবস্তের আগে তালুকদারগণ জমিদারগণের মাধ্যমে খাজনা বা রাজস্ব পরিশোধ করতো। দশ সনা নীতির ফলে তালুকদারগণ সরাসরি কোম্পানির নিকট খাজনা পরিশোধের সুযোগ লাভ করে। ফলে কোম্পানি লাভবান হলেও জমিদারগণ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জমিদারগণ এই বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া মেনে নিতে পারেনি।

    আলেকজেণ্ডার ডাও তাঁর ‘হিস্ট্রি অব হিন্দুস্তান’ (১৭৭২) এবং হেনরি পান্ডলো তাঁর ‘এ্যান এসে অন দি কাল্টিভেশন অব দি ল্যান্ডস ইমপ্রুভমেন্ট অব দি রেভিনিউস অব বেঙ্গল’ (১৭৭২) গ্রন্থে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে চিরসস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। ডাও মনে করেছিলেন, ভূমি রাজস্ব চিরসস্থায়ী বন্দোবস্ত হলে কৃষির উন্নতি ঘটবে, আর কৃষির উন্নতি ঘটলে বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। অপর দিকে হেনরি পান্ডলো প্রাকৃতিক সম্পদকে আয়ের প্রধান উৎস বিবেচনা করে ভূমি রাজস্বের জন্য চিরসস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।

    ইংল্যাণ্ডের রাজনৈতিক মহলে চিরসস্থায়ী বন্দোবস্তের স্বপক্ষে অনুকূল মনোভাব ও তৎকালীন গভর্ণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশের জোর সুপারিশে ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী পিট এবং বোর্ড অব কন্ট্রোলের প্রেসিডেন্ট হেনরি ডান্সাস ভারত বিষয়ে অভিজ্ঞ চার্লস গ্রাট এবং জন শোরের সংগে আলোচনা করে ১৭৯২ সালের ২৯ আগস্ট ডিরেক্টর সভায় চিরসস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য গভর্ণর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিশকে নির্দেশ দেন। লর্ড কর্ণওয়ালিশ ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ চিরসস্থায়ী বন্দোবস্তের ঘোষণা দেন।

    এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদার ও স্বাধীন তালুকদারগণ নির্ধারিত রাজস্ব নিয়মিত পরিশোধের বিনিময়ে উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারি ভোগের সুযোগ পেলেন। এই আইনে ভবিষ্যতে খরা বা দুর্যোগের কারণে রাজস্ব মওকুফ রহিত করা হয়। প্রতি বছর ৩০ চৈত্র সূর্যাস্তের পূর্বে নির্ধারিত খাজনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো জমিদারি অথবা অংশ বিশেষ বিক্রি করে সরকারি পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়। জমিদারগণকে পুলিশি ও ম্যাজিস্ট্রেসি দায়িত্ব পালন হতে বিরত করা হয়। এই আইনে জমিদারগণকে জমিদারি বিক্রয়, বন্ধক, দান বা অন্য কোন ভাবে হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

    চিরসস্থায়ী বন্দোবস্তের পরবর্তী সময়ে ভাওয়াল জমিদার পরিবার আশে-পাশের বহু ছোট-খাট জমিদারি এবং জমি ক্রয় করে একটি বড় জমিদারির মালিক হয়। ১৮৫১ সালে ভাওয়াল পরিবার নীলকর জেমস্‌ ওয়াইজের জমিদারি ক্রয় করেন। ফলে ভাওয়াল পরগণার সম্পূর্ণটাই ভাওয়াল জমিদারির অধীনে আসে। সরকারি রাজস্ব নথিপত্র হতে জানা যায় যে, ভাওয়াল জমিদার ৪,৪৬,০০০ টাকার বিনিময়ে নীলকর ওয়াইজের জমিদারি ক্রয় করেছিলেন, যা ছিল সেই যুগের মূল্যমান বিচারে একটি বিশাল অঙ্ক।

    ১৮৭৮ সালের এই পরিবারের জমিদার কালি নারায়ণ রায় ঢাকার নর্থ ব্রুক হলে ভারতের বড়লাটকে এক জমকাল বিশাল সংবর্ধনা প্রদান করেন। বড়লাট লর্ড লিটন এই বিশাল জমকাল সংবর্ধনায় অবিভূত হন। জমিদার কালি নারায়ণ রায়ের প্রভুভক্তিতে হন মুগ্ধ। বড়লাট জামিদার কালি নারায়ণ রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং বংশ পরম্পরায় রাজা উপাধি ব্যবহারের অনুমতি দেন। সেই থেকে জমিদার কালি নারায়ণ রায় হলেন রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরী এবং ভাওয়াল জমিদার পরিবারটি পরিণত হলো ভাওয়াল রাজ পরিবার। কালি নারায়ণ রায় চৌধুরী ছিলেন একজন চৌকস জমিদার। তাঁর বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য পোষণ, সর্বোপরি প্রজাদের সুযোগ সুবিধার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি জমিদারি প্রসারে এবং পরিচালনায় অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছিল। ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর’ এর লেখক প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালী প্রসন্ন ঘোষ ছিলেন কালি নারায়ণ রায়ের এস্টেট ম্যানেজার।

    রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর স্বর্ণময়ী নামে একজন সৎবোন ছিল। কুলিন পাত্র ছাড়া রাজ পরিবারের কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়ার রেওয়াজ ছিল না। রায় পরিবারের মেয়েদের বিয়ের পর জামাইদের প্রায় সবাইকে ঘরজামাই হিসেবে রাজবাড়িতে রেখে দেয়া হতো। অবশ্য স্বর্ণময়ী তার বিয়ের কয়েক বছর পরেই স্বামী ও কন্যাদের নিয়ে রাজবাড়ি ছেড়ে আলাদা বাড়িতে উঠেছিলেন। তিনি মারা যান ১৯১৭ সালে। স্বর্ণময়ীর কমলকামিনী ও মোক্ষদা নামে দুটি মেয়ে ছিল। ভাওয়াল সন্যাসী মামলার আগেই মোক্ষদা ফণী নামে এক পুত্র ও শৈবালিনী নামে এক কন্যা রেখে মারা যান। ভাওয়াল সন্যাসী মামলায় কমলকামিনী মেজো কুমারের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। অপর দিকে মোক্ষদার পুত্র ফণী ও কন্যা শৈবালিনী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ১নং বিবাদি অর্থাৎ বিভাবতীর পক্ষে।

    রাজা কালি নারায়ণ রায় চৌধুরীর তিন স্ত্রীর মধ্যে ছোট স্ত্রীর নাম ছিল রাণী সত্যভামা দেবী। অপর দুই স্ত্রী ছিলেন রাণী যামিনী দেবী এবং রাণী ব্রহ্মময়ী দেবী। এই দুই রাণী নিঃসন্তান ছিলেন। রাণী সত্যভামা দেবীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এবং কন্যা কৃপাময়ী দেবী। পিতার মৃত্যুর পর রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ভাওয়ালের রাজা হন। তিনি বিয়ে করেছিলেন বরিশাল জেলার বানারিপাড়ার বিলাসমণি দেবীকে। রাজা রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী পিতার ন্যায় যোগ্য ও কৌশলী ছিলেন। তিনি জমিদারির আরো বিস্তৃতি ঘটান। এই সময়ে ভাওয়াল জমিদারি ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় বিস্তৃত হয়ে পড়ে এবং পূর্ব বঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারিতে পরিণত হয়।

    রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর স্ত্রী রাণী বিলাসমণি দেবীর গর্ভে তিন পুত্র ও তিন কন্যা জন্ম গ্রহণ করেন। প্রথম সন্তান কন্যা ইন্দুময়ী দেবীর বিয়ে হয়েছিল গোবিন্দচন্দ্র মুখোপধ্যায় এম এ বি এল এর সাথে। দ্বিতীয় সন্তান কন্যা জ্যোতির্ময়ী দেবীর বিয়ে হয়েছিল জগদীশ চন্দ্র মুখোপধ্যায়ের সঙ্গে। তৃতীয় সন্তান পুত্র বড়কুমার রণেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বিয়ে করেছিলেন সরযূবালা দেবীকে। তিন কুমারের মধ্যে রণেন্দ্র নারায়ণ কিছুটা লেখা পড়া শিখেছিলেন। ফলে ব্রিটিস রাজ পুরুষদের সাথে তিনি যোগাযোগ রক্ষা ও আলাপচারিতা করতে পারতেন। চতুর্থ সন্তান পুত্র কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী কোনরূপ নাম সহি করতে পারতেন। তিনি ছিলেন অমিতাচারী। খেলাধুলা আর শিকারের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল। তিনি ১৯০২ সালের মে মাসে হুগলীর বিষ্ণুপদ মুখার্জির মধ্যমা কন্যা বিভাবতীকে বিয়ে করেন। রমেন্দ্র নারায়ণ মেজোকুমার নামে পরিচিত ছিলেন। পঞ্চম সন্তান পুত্র কুমার রবীন্দ্র নারায়ণ রায়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল আনন্দ কুমারী দেবীর। ষষ্ঠ সন্তান কন্যা তড়িন্ময়ী দেবীর বিয়ে হয়েছিল বাবু ব্রজলাল ব্যানার্জী এম এ বি এল এর সাথে।

    সরকারি নথিপত্রে দেখা যায় ১৮৯৭ সালের প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে জয়দেবপুর রাজবাড়ির নানা অংশে ফাটল ধরেছিল। সেই কারণে রাজবাড়ি ও রাজবিলাশের নতুন করে সংস্কার করা হয়েছিল। যখন রাজবাড়ির এই সংস্কারের কাজ চলছিল, সেই সময়ে হঠাৎ একদিন রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। কিন্তু শত চিকিৎসা ও চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠেননি। ১৯০১ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকায় নলগোলার বাড়িতে ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়। নিজ গ্রামে থেকে নিজে জমিদারী পরিচালনা করার পরিবর্তে এস্টেট ম্যানেজার কালী প্রসন্ন সিংহের উপর সব ছেড়ে দিয়ে ভোগ বিলাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

    হিন্দু আইনানুসারে তাঁর মৃত্যুর পর ভাওয়াল রাজ্য বা এস্টেটের মালিক হন তিন পুত্র। কিন্তু কুমারগণ নাবালক থাকায় তাঁদের মা রাণী বিলাসমণি দেবী ট্রাস্টি হিসেবে এস্টেট পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। আর এ কারণে ভাওয়াল রাজ এস্টেট এক সময়ে রাণী বিলাসমণি এস্টেট নামে পরিচিতি লাভ করেছিল। রাণী বিলাসমনি ম্যানেজারকে বরখাস্থ করে রাশ টেনে ধরলেও তিন পুত্রকে আনতে পারেননি বাগে।

    Related Post:

  • You might also like

    No comments:

    Post a Comment

Popular Posts