-->

Welcome here

Confirmed
Deaths
Recovered
Updated:
  • Bhawal to Gazipur (Introducing and Naming)

    ভাওয়াল থেকে গাজীপুর
    (পরিচিতি ও নামকরণ)

    Map: Gazipur
    মানচিত্রঃ গাজীপুর

     ভাওয়াল পরিচিতি 

    বহুকাল পূর্বে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীর হতে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা পার হয়ে সুসং পাহাড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগের মধ্যে জয়ানশাহি নামে একটি গহীন অরণ্য অঞ্চল ছিল। এর উত্তরাংশকে বলা হতো মধুুপুরের অরণ্য অঞ্চল এবং দক্ষিণাংশকে বলা হতো ভাওয়ালের অরণ্য অঞ্চল। কেহ কেহ মনে করেন উত্তর দক্ষিণে এই অরণ্য অঞ্চলের (দৈর্ঘ্য) ছিল পঁয়তাল্লিশ মাইল এবং পূর্ব-পশ্চিমে (প্রস্থ) ছিল ছয় হতে ষোল মাইল।
    বিভিন্ন সূত্র থেকে ধারনা করা হয় যে, প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বঙ্গ জনপদের এ অঞ্চল সম্রাট আশোকের শাসনাধীন ছিল। এ ধারণার কারন কালিয়াকৈরে অবস্থিত সাকাশ্বর স্তম্ভ। প্রাচীনযুগ থেকেই এ অঞ্চলের ডবাক ডাকুরাই সাকেশ্বর প্রভৃতি ক্ষুদ্র জনপদ পাল, দাস, চেদী ও চন্ডালদের দ্বারা শাসিত হয়। রাজা যশোপাল, শিশুপাল প্রতাপ ও মহেন্দ্ৰ ভাওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ স্থাপন করেন। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, এই ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্যগুলো চেদী রাজ্য নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কালিয়াকৈর (আংশিক), কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, টঙ্গীসহ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও ও ত্রিশাল উপজেলার অংশবিশেষ, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার অংশবিশেষ, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তরাংশ এবং টঙ্গীর পশ্চিমে হরিরামপুর ইউনিয়ন নিয়ে এই ক্ষুদ্র চেদী রাজ্যগুলো বিদ্যমান ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর পরবর্তী কালে প্রায় ছয়শ বছর পাঠান ও মুঘলরা এদেশ শাসন করে। তাঁদের আমলে গড়ে উঠে এক প্রশাসনিক অঞ্চল– যা ভাওয়াল পরগণা নামে পরিচিত। ভাওয়াল পরগণার উত্তরে আটিয়া ও আলেপসিং পরগণা, দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা, পূর্বে লক্ষ্যানদী ও মহেশ্বরদি পরগণা এবং পশ্চিমে কাশিমপুর ও দুর্গাপুর পরগণা। বর্তমান গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলার কিছু অংশে ছিল ভাওয়াল পরগণার অবস্থান।

     ভাওয়াল নামকরণ 

    অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় ভাওয়াল অঞ্চলের নাম নিয়ে রয়েছে নানা মহলের নানা অভিমত। এসব অভিমতের পেছনে কোন দলিল-দস্তাবেজ, শিলালিপি, প্রাচীন স্তম্ভ, মৃৎলিপি বা গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। তবে নামকরণের বিষয়টি প্রচলিত রয়েছে মুখে মুখে, যুগ হতে যুগান্তরে। নিচে কয়েকটি অভিমত তুলে ধরা হলো। ভাওয়াল গবেষক নুরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্নের মতানুসারে, চন্ডাল রাজাদের পতনের পর ভাওয়াল গাজীদের অধিকারে আসে। তাঁর মতে আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ থেকেই প্রথম জানা যায় যে, এ অঞ্চলের নাম ভাওয়াল।

    • রাজা ভবপাল বা ভদ্রপালের নাম হতে ভাওয়াল
    পাল শাসনামলে এ অঞ্চল পাল রাজ্যভুক্ত ছিল। পাল রাজাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভবপাল বা ভদ্রপাল। এই ভদ্রপালের এক অধঃস্তন পুরুষ শিশুপাল এক সময়ে এ অঞ্চল শাসন করতেন। অনেকে মনে করেন রাজা ভবপাল বা ভদ্রপালের নামানুসারে তার সময়ে এলাকার নাম হয়েছে ভাওয়াল। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ‘ভবপাল’ নামক রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়।

    • ভগালয় হতে ভাওয়াল
    ভগ+আলয় হতে ভগালয় শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ভগ অর্থ ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য। এই ছয়টি ভগ বা গুণের যিনি অধিকারী, তিনি ভগবান। আলয় অর্থ নীড়, ঘর, বাড়ি, আশ্রয়স্থল, নিকেতন, ভবন ইত্যাদি। ভগালয় শব্দের অর্থ দাঁড়ায় খ্যাতিমান, যশ্বসী, বিক্রমশালী বা সম্পদশালীর ভবন বা নিকেতন। এই অঞ্চলে সম্পদ বা ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য থাকায় ভগালয় হতে ভাওয়াল শব্দের উৎপত্তি বলে অনেকে ধারণা করে থাকেন। মহাভারতে 'ভগালয়' নামেরও উল্লেখ রয়েছে।

    • রাজা ভগদত্তের নাম হতে ভাওয়াল
    পৌরাণিক তথা মহা ভারতের যুগে ভগদত্ত নামে এক বিক্রমশালী রাজা ছিলেন। তিনি এ এলাকা শাসন করতেন বিধায় তাঁর নামানুসারে ভাওয়াল শব্দটি এসেছে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

    • আঁতিভোয়াল থেকে ভাওয়াল
    অনেকে মনে করেন প্রথম দিকে এই এলাকাকে আঁতিভোয়াল বা আঁতিভোল নামে ডাকা হতো। তারা প্রমাণ স্বরূপ উল্লেখ করেন যে, ভাওয়ালের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আঁতিভোল নামে একটি প্রাচীন নগরী ছিল। আটিয়া ও ভাওয়াল সন্নিহিত দুটি পরগণার নাম আঁতিভোল হতে এসেছে। তাদের ধারণা আঁতিভোয়াল শব্দ থেকে ভাওয়াল নামের উৎপত্তি হয়েছে।

    • ভাওয়াল গাজীর নাম হতে ভাওয়াল
    পাঠান সম্রাট শের শা’র নিকট থেকে বদোবস্ত নিয়ে এই অঞ্চলের জায়গীরদারী পান ভাওয়াল গাজী। ক্রমে ভাহওয়াল (ভাওয়াল) গাজী শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং একে একে তিনি এ অঞ্চলের চেদী রাজ্যগুলো দখল করে নেন। অতঃপর নিজের নামানুসারে এই জনপদের নামকরণ করেন 'ভাওয়াল বাজুহা'। তাঁর প্রকৃত নাম ভাহওয়াল গাজী, তা থেকে স্থানীয় ভাষায় তাকে বলা হয় ভাওয়াল গাজী। নবাবী আমলে ভাওয়াল বাজুহা বা পরগনার রাজস্ব আদায়ের জন্য ধীরাশ্ৰমে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধীরাশ্ৰমকে ঘিরে সে আমলে এখানে গড়ে ওঠে এক সমৃদ্ধ জনপদ যার নিদর্শন এখানে ভগ্ন দালান, দিঘী ও রাস্তাঘাট, রাহাপাড়া, তেলীনগর, হায়দ্রাবাদ, রথখোলা, ভারারুল, মেঘডুবি প্রভৃতি গ্রামে এসব নিদর্শনের কিছু কিছু এখনো অবশিষ্ট আছে।

    • উপভাষিক শব্দ হতে ভাওয়ালের উৎপত্তি
    ভাওয়াল ও মধুপুর অরণ্যাভ্যন্তরে রাজবংশী ও হাজং উপজাতির লোকেরা বাস করে। অনেকের মতে তারা ঘন গজারি জাতীয় গাছে আচ্ছাদিত গহীন লাল মাটির টিলা অঞ্চলকে ভাওয়াল বলে অভিহিত করতো। আবার অনেকের মতে পাঠান ও মুঘলরা তাদের শাসিত ছোট ছোট অঞ্চলকে ওজিয়াল বলতো। এই ওজিয়াল থেকে ভাজিয়াল বা ভাওয়াল শব্দটি এসেছে।

    ভাওয়াল নামকরণের পিছনে এরূপ আরো বহু মত রয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য মতগুলো ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে ভাওয়াল গাজীর নামানুসারে ভাওয়াল পরগণার নামটি সার্থক বলে মনে হয়।

     গাজীপুর নামকরণ 

    দিল্লির সম্রাট আকবরের সময়ে যে বারো জন ভূঁইয়া তৎকালীন বাংলায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন তন্মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাওয়াল গাজীর ছেলে ফজল গাজী। একবার ভাওয়ালের সীমানা নিয়ে ফজল গাজীর পঞ্চম পুরুষ দৌলত গাজীর (১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দ হতে) সাথে বিরোধ বাধে ঢাকার নবাব নাজিমের । মামলা গড়ায় মুর্শিদাবাদের নবাব কোর্টে। দৌলত গাজী জয়ী হয়। গাজীদের বিরত্বের জন্য তাদের নামানুসারে করা হয় গাজীপুর নামকরণ।

     গাজীপুর জেলার প্রেক্ষাপট 

    ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ভাওয়ালগড় জেলা নামে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিন্যাসের একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেন। পরবর্তী পৰ্যায়ে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাগণ ঢাকা সদর উত্তর মহকুমাকে ভাওয়ালগড় মহকুমা নামে জয়দেবপুরে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তখন থেকেই এ অঞ্চল ভাওয়ালগড় জেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।
    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভাওয়ালগড়কে জেলা হিসেবে উন্নীত করার দাবি উত্থাপন করে।
    ১৯৭৮ সালে জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আ.ক.ম মোজাম্মেল হক কে আহ্বায়ক করে প্রাথমিকভাবে ঢাকা সদর উত্তর মহকুমাকে জয়দেবপুরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। সে সময় সরকার মহকুমার নামকরণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির পক্ষ থেকে 'ভাওয়াল’, ‘ভাওয়ালগড়’ ও ‘গাজীপুর’-এ তিনটি নাম প্রস্তাব করে সরকারের কেবিনেট বিভাগে পাঠানো হয়। ভাওয়ালের বীর গাজীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার ‘গাজীপুর’ নামটি অনুমোদন করে। এভাবে গঠিত হয় গাজীপুর মহকুমা।
    ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু গাজীপুর মহকুমা তা থেকে বাদ পড়ে। এতে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অবশেষে মরহুম হাবিবুল্লাহকে আহবায়ক ও আ.ক.ম মোজাম্মেল হককে সদস্য সচিব করে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট গাজীপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্যগণ গাজীপুর জেলা গঠনের দাবিতে ব্যাপক প্রচার, যোগাযোগ ও আন্দোলন শুরু করলে সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে গাজীপুরকে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
    ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ তৎকালীন সরকারের মুখ্য অর্থসচিব এম সাইদুজ্জামান নতুন গাজীপুর জেলার উদ্বোধন করেন। আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে গাজীপুর ৩৯তম।

    Related Post:

  • You might also like

    No comments:

    Post a Comment

Popular Posts