-->

Welcome here

Confirmed
Deaths
Recovered
Updated:
  • Bhawal to Gazipur (Case of the Monk)

    ভাওয়াল থেকে গাজীপুর
    (সন্ন্যাসীর মামলা)

    Graphics: Court
    Graphics: Court
    ১৯৩০ সালের এপ্রিল ২৪ তারিখে ভাওয়াল সন্যাসীর আইনজীবীরা বিভাবতী দেবী ও অন্যান্য মালিকদের বিরুদ্ধে ভাওয়াল এস্টেটের সম্পত্তির অধিকার চেয়ে মামলা করেন। জেলা জজ অ্যালান হেন্ডারসন বিচারপতি পান্নাবল বসুকে এই মামলার বিচারে নিয়োগ করেন। বিজয় চন্দ্র চক্রবর্তী ভাওয়াল সন্যাসীর প্রধান উকিল হিসাবে কাজ করেন। বিবাদীপক্ষের উকিল ছিলেন অমিয় নাথ চৌধুরী। বিচার শুরু হয় ১৯৩৩ সালের নভেম্বর ৩০ তারিখে।
    আর্জিতে মেজোকুমার জানান সত্যেন্দ্রনাথের প্ররোচনায় ছলনা করে তাঁকে দার্জিলিং নেয়া হয় আশু ডাক্তারের সহায়তায় হত্যা করতে। বিষ প্রয়োগে অচেতন হলে দাহ করতে নেয়া হয় শ্মশানে। আকষ্মিক ঝড় শিলা বৃষ্টিতে তাঁকে ফেলে রেখে লোকজন আশ্রয় নেয় অন্যত্র । জ্ঞান ফিরে নিজেকে দেখতে পান নাগা সন্যাসীদের মাঝে দেখতে। বিষের প্রভাবে স্মৃতি বিলুপ্ত। সন্যাসীদের সঙ্গে বেনারস, কাশ্মীরের অমরনাথ পরিভ্রমণ শেষে অমরনাথে শিষ্যত্ব নেন গুরু ধর্মদাসের নিকট। আবছা আবছা মনে পড়তে শুরু করে অতীত জীবনের কথা । কয়েক বছরে চষে ফেলেন সারা উত্তর ভারত আর নেপাল। হঠাৎ মনে পড়ে, তিনি এসেছিলেন ঢাকা থেকে। গুরুর পরামর্শে তিনি আসেন ঢাকা। রাজবাড়িতে এসে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো ফিরে আসে পূর্বস্মৃতি।
    জানা যায়, দার্জিলিং-এ মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দেখতে এসেছিলেন দার্জিলিং এর ডাক্তার প্রাণকৃষ্ণ আচার্য। কিন্তু  ব্রাহ্মণ বলে তাঁকে বাঁধা দেয়া হয় মৃতদেহ ছুঁতে। তাই তিনি নিশ্চিত নন সে ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে।

    বিচার শুরু হয় ১৯৩৩ সালের নভেম্বরের ৩০ তারিখে। উভয় পক্ষ থেকে কয়েকশ সাক্ষী হাজির করা হয়। তাদের অনেকের সাক্ষ্য ছিলো পরস্পরবিরোধী। বিবাদী পক্ষ কুমারের বোন জ্যোতির্ময়ী দেবীকে জেরা করে। তিনি সন্ন্যাসীর পক্ষে ছিলেন, এবং দাবী করেন, সন্ন্যাসীই কুমার। তিনি আরো দাবী করেন, সন্ন্যাসীর চেহারায় তাঁদের বংশের ছাপ রয়েছে, এবং সন্ন্যাসী  বাংলা বলতে পারেন। বাদীপক্ষ কুমারের স্ত্রী বিভাবতী দেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিভাবতী দেবী কুমারের চেহারার সাথে সন্ন্যাসীর চেহারার কোনো মিল নেই বলে দাবী করেন। কুমারের অন্য ভাইয়ের বিধবা স্ত্রী অন্নদা কুমারী দাবী করেন, কুমার রমেন্দ্রনারায়ন ইংরেজি বলতে পারতেন, এবং বাংলা বলতে ও লিখতে পারতেন। এর কোনোটাই সন্ন্যাসী পারতেন না। কিন্তু কুমারের ভাষাজ্ঞানের প্রমাণ হিসাবে পেশ করা চিঠি গুলো পরে জাল বলে প্রমাণিত হয়। মেজকুমারের সাথে সন্ন্যাসীর  গাত্র বর্ণ (উজ্জ্বল ফর্সা), ঢেউ খেলানো চুল, চোখের রঙ (ঈষৎ পিঙ্গল/কটা), বাম বাহুতে বাঘের থাবার দাগ, লিঙ্গের/যৌনাঙ্গের বাইরে একটা ক্ষুদ্র তিল, বাম পায়ের গোড়ালির উপর ক্ষত চিহ্ন, এই সব কিছুর সাদৃশ্য- সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে বিচারক পান্নালাল বসু কাজ করেন তিন মাস ধরে চুড়ান্ত রায় নিয়ে ।
    ১৯৩৬-এর ২৪ আগস্ট। লোক ভেঙে পড়ছে আদালতে। টেলিগ্রামে প্রেরণের জন্য হাজির সাংবাদিকরা। সাংবাদিকতার ইতিহাসে এই প্রথম সান্ধ্য সংস্করণ প্রকাশ হয় বাংলা কাগজ বসুমতি ও আনন্দ বাজার কাগজে । ৫২৫ পাতার রায়ের চূড়ান্ত বক্তব্য, “ফরিয়াদিই রমেন্দ্র নারায়ণ রায়, ভাওয়ালের প্রয়াত রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায়ের দ্বিতীয় পুত্র।” বিচারক তীক্ষ্ণ সমালোচনা করেন আমলাদের ভূমিকার। বিচারক পান্নালাল বসু তাই মামলার পরই অবসর নেন চাকুরি হতে ।

    ভাওয়াল এস্টেটে রমেন্দ্রনারায়ণের সম্পত্তির ভাগ থেকে দাবিদার সন্ন্যাসীকে টাকা নিতে অনুমতি দেয়া হয়। রমেন্দ্রনারায়ন অন্যান্য বিষয়ের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্থ গ্রহণ স্থগিত রাখেন এবং এই সম্পত্তির কর্তৃত্ব কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের হাতেই রাখেন। একই সময়ে তিনি বিয়ে করেন।

    হাইকোর্টে আপিল করলেন রানি বিভাবতী দেবী ও তাঁর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি। ১৯৩৮-এর ১৪ নভেম্বর থেকে ১৯৩৯-এর ১৪ আগস্ট, মোট ১৬৪ দিন ধরে শুনানী শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকে। এর কয়েক মাসের মধ্যেই হৃদরোগে মারা যান সত্যেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি। মামলার পর বিভাবতী দেবীর কোলকাতার স্বাভাবিক সামাজিক জীবনযাত্রা চরম ভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানে লোকে আঙুল দেখিয়ে বলাবলি করত, “এই সেই মেজ রাণী যে স্বামীকে বিষ খাইয়েছিল!”

    রাজস্ব বোর্ড মামলা নিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখে তখনকার মতো। তবে বিভাবতী দেবী হাল ছাড়তে রাজি হননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে মামলার আপিল ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকে। ঐ বছর বিভাবতী দেবীর আইনজীবীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করে। জার্মান বিমান হামলায় কাউন্সিলের কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রিভি কাউন্সিলের অধিবেশন ঘটে হাউজ অফ লর্ডসে। ১৯৪৫ সালে সেখানেই শুনানি শুরু হয়। ডি এন প্রিট দাবিদারের পক্ষে এবং ডব্লিউ ডব্লিউ কে পেইজ, কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

    প্রিভি কাউন্সিল আপিল শুনতে রাজি হয়। লর্ড থাঙ্কের্টন, লর্ড হার্বার্ট ডু পার্স্ক, এবং স্যার চেতুর মাধবন আপিলের বিচার করেন। ২৮ দিন ধরে শুনানি চলে। ১৯৪৬ সালের জুলাই এর ৩০ তারিখে বিচারকেরা দাবিদারের পক্ষে রায় দেন, এবং আপিল নাকচ করে দেন। পরের দিন কলকাতায় টেলিগ্রাফ মারফত মামলার রায় জানানো হয়। সন্ন্যাসী রাজার সব মিলে গেলেও তার হাতের ছাপ মিলেনি। এই রায়ের পর কালীবাড়িতে পুজো দিতে যাবার সময় ১৯৪৬ এর ১লা আগস্ট হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে তেষট্টি বৎসর বয়সে প্রাণ ত্যাগ করেন মেজকুমার রামেন্দ্র নারায়ণ। অভিনন্দন জানাতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তম্ভিত হয়ে ফিরে যায় লোকজন।
    মেজকুমারের মৃত্যুতে অন্যতমা রাণী হিসাবে রাণী বিভাবতী পান আট লক্ষেরও অধিক টাকা। কিন্তু তিনি তা প্রত্যখ্যান করেন কারণ ফিরে আসা এই মেজ কুমারকে তিনি কখনোই তাঁর স্বামী (মেজ কুমার) বলে মেনে নেন নি। রাণী বিভাবতী এর পর বেঁচেছিলেন কুড়ি বৎসর।

    মামলার শুরু ১৯৩০ সালে আর শেষ ১৯৪৬ এ। পরিবারের সদস্য, এস্টেটের কর্মচারী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ইউরোপীয়, প্রজাবর্গ মিলিয়ে উভয় পক্ষে সাক্ষ্য দেয় ১৫৪৮ জন। গুরুত্বপূর্ণ ক’জনের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বিলেতে বসে কমিশন। এই মামলার নথিপত্র বহনের জন্য চার-চারটি গরুর গাড়ি লাগার গল্প প্রচলিত ছিল গাজীপুর-ময়মনসিংহ গড় অঞ্চলে।

    Related Post:


  • You might also like

    No comments:

    Post a Comment

Popular Posts