ভাওয়াল থেকে গাজীপুর
(রাজপরিবারের পতন)
(রাজপরিবারের পতন)
Raja Rajendra Narayan Ray |
১৯০৯ সালের ১৮ই এপ্রিল চিকিৎসা ও বায়ু পরিবর্তনের জন্য মেজ কুমারের দার্জিলিং যাত্রা। সঙ্গী ছিলেন পত্নী বিভাবতী দেবী, বিভাবতীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, পারিবারিক চিকিৎসক আশুতোষ দাস গুপ্ত সহ মোট ২৭ জন। সেখানে অবস্থান নেন ভাড়া করা একটি ছোট বাড়ি ‘স্টেপ এসাইড’ এ। প্রথম কয়েকদিন কাটে নির্বিঘ্নে। মে মাসের শুরুতে মেজ কুমারের পেটে ব্যাথাসহ নানা শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। প্রতিদিন দার্জিলিং থেকে জয়দেবপুরে তার বার্তার মাধ্যমে রাজার (মেজ কুমার) স্বাস্থ্যের খবর পাঠানো হতো।প্রথম টেলিগ্রামে রাজার ৯৯ ডিগ্রি জ্বর, পরের টেলিগ্রামে জ্বর বৃদ্ধি, পেটে যন্ত্রণা, দার্জিলিং সিভিল সার্জন দেখে গেছেন ইত্যাদি খবর আসতে থাকে।
৭ মে সন্ধ্যা থেকে কুমারের অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও বমি, রক্ত মিশ্রিত পায়খানা হতে থাকে। ৮ মে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে কোনো এক সময় রাজার মৃত্যু হয়েছে, বলা হয়। দার্জিলিংয়ের শ্মশানে তড়িঘড়ি করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় বলে জানানো হয়। দার্জিলিং ভ্রমণের মাত্র কুড়ি দিনের মধ্যে তাঁর মৃত্যু। দার্জিলিংয়ের শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ১১ই মে তারিখ সদলবলে মেজরাণী ফিরে আসেন জয়দেবপুরে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় অনাড়ম্বর, নেহায়েতই নিয়ম রক্ষার। মেজোকুমার রামেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর কথিত মৃত্যুর পর এস্টেটের এক তৃতীয় অংশের মালিকানা চলে যায় তাঁর স্ত্রী বিভাবতী দেবীর হাতে। বিভাবতী তাঁর ভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ এর হাতে এস্টেটের এক তৃতীয়াংশের ভার ছেড়ে দিয়ে কোলকাতায় গিয়ে বিধবা বেশে জীবন যাপন করতে থাকেন। রানী বিলাসমনির মৃত্যুর পর চাকুরীর সন্ধানে এসে মেজরানীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জেঁকে বসেছিলেন রাজবাড়িতে।
বড় কুমার রণেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি ১৯১২ সালে ২৮বছর বয়সে এবং ছোট কুমার রবীন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরি ১৯১৩ সালে ২৭ বছর বয়সে মৃত্যবরণ করেন। উভয়ে নিঃসন্তান ছিলেন। অবশ্য ছোট কুমারের স্ত্রী আনন্দ কুমারী দেবী পরবর্তীকালে কুমার রাম নারায়ণ রায় চৌধুরিকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। রাজ পরিবারের সদস্য বলতে বাকি থাকলেন নিঃসন্তান বিধবা রাণী তিনজন, যাঁদের কারও সম্পত্তিই আর দখলে ছিল না।
ভাওয়াল রাজ বংশের তিন কুমারের মৃত্যুর পর ১৯১৩ সালে ব্রিটিস সরকার ভাওয়াল রাজ এস্টেট পরিচালনার ভার কোর্ট অব ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৭৯ এর ৬ ধারার ক্ষমতা বলে গ্রহণ করেন।
Related Post:
No comments:
Post a Comment